মুহা. নিজামুল হক নাঈম একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ। তিনি ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমদ্দিন) আসনের গণমানুষের নেতা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) জেনারেল সেক্রেটারি ও লালমোহন-তজুমদ্দিন উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজ উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ জনাব নাঈম বহুসংখ্যক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা নিজামুল হক নাঈম ভোলা-৩ আসনের মানুষের কাছে এক পরিচিত মুখ, যিনি জাতীয় রাজনীতি এবং নিজ এলাকার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনকল্যাণমূলক কাজে তাঁর অসামান্য প্রচেষ্টা তাকে মানুষের হৃদয়ে আসীন করেছে।

পারিবারিক জীবন

মুহা. নিজামুল হক নাঈম ১৯৮৪ সালে ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্বচরউমেদ গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলহাজ্ব মৌলভি সিরাজুল হক একজন বিশিষ্ট আলেম ও প্রবীণ শিক্ষক এবং মাতা জেবুন নেছা একজন রত্নগর্ভা মহীয়সী নারী। তাঁর দাদা হাজী ওমর আলী ছিলেন ইসলামী শিক্ষা ও দ্বীনি দাওয়াতের একনিষ্ঠ খাদেম। তিনি প্রখ্যাত আলেম ও ঐতিহ্যবাহী করিমগঞ্জ মাদরাসার প্রখ্যাত ওস্তাদ মৌলভি আব্দুল ওয়াহেদের নাতি। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী উম্মে হাবীবা মুনিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে ঢাকার একটি দেশসেরা ইংলিশ ভার্সন স্কুলে কর্মরত আছেন।

শিক্ষাজীবন

মুহা. নিজামুল হক নাঈম-এর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় তাঁর পিতার চাকরিস্থল ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি পূর্বচরউমেদ আহমদিয়া দাখিল মাদরাসা এবং ভেদুরিয়া সেরাজিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল পাশ করেন। এরপর ঢাকার শাহ আলী মাদরাসা থেকে আলিম এবং ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল ও কামিল (মাস্টার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন

পেশাগত জীবনে মুহা.নিজামুল হক নাঈম একজন সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

শিক্ষা বিস্তারে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ঢাকার ডেমরা আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি আহসানু আমালা একাডেমি এবং আহসানু আমালা হিফজ মাদরাসার চেয়ারম্যান হিসেবে আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আদর্শ প্রজন্ম গঠনে সচেষ্ট রয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেও তিনি কাজ করছেন। তিনি ভোলার লালমোহনে এসটিএস ডায়াগনস্টিক সেন্টার,চরফ্যাসনে এসটিএস হাসপাতাল এবং সোনারতরী হেলথ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, যা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

ব্যবসা ও উদ্যোক্তা হিসেবেও তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ভোলার কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি কৃষি খামার ও এগ্রো প্রজেক্ট পরিচালনা করছেন, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি তিনি তরুণদের কল্যাণেও নিবেদিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তিনি অসংখ্য তরুণের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করে চলেছেন।

সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবন

ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও ইসলামের পক্ষে ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ে মুহা. নিজামুল হক নাঈম ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে ঢাকা আলিয়া মাদরাসা শাখার সভাপতি (২০০৪), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি (২০০৫-২০০৮), ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি (২০০৯) এবং ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রকাশনা ও সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে ছাত্রজীবন শেষে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) প্রতিষ্ঠায় তিনি অন্যতম ভূমিকা পালন করেন এবং বর্তমানে পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও যুলুম-নির্যাতনের শিকার

মুহা. নিজামুল হক নাঈম তাঁর সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে বারবার রাষ্ট্রীয় জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদ ও কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি একাধিকবার গুমের শিকার হন, গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ সময় কারাগারে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেন। ভয়াবহ নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও কারাবরণের মতো কঠিন অভিজ্ঞতার পরও তিনি তাঁর আদর্শ ও সংগ্রামের পথ থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের দাবিতে তিনি সর্বদাই অটল ও অবিচল।

সমাজকল্যাণে অবদান

জনাব নাঈম ছাত্রজীবন থেকেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নানাবিধ জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০০৩ সালে ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি ফাজিল-কামিলকে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের মান প্রদানের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ঢাকায় আগত ভোলার শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তিনি ‘স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ভোলা’ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদের কাউন্সিলিং, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও উচ্চশিক্ষায় কোচিং সেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ২০০৫ সালে দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি কলেজ জগন্নাথ কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি ঢাকায় ডেমরা আইডিয়াল কলেজ, আহসানু আমালা একাডেমি ও আহসানু আমালা হিফজ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিজ এলাকা লালমোহনে প্রতিষ্ঠা করেছেন শাহবাজপুর রেসিডেন্সিয়াল মাদরাসা। স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি চরফ্যাশনে ২০ শয্যাবিশিষ্ট ‘এসটিএস হাসপাতাল’ এবং লালমোহনে ‘এসটিএস ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ‘সোনারতরী হেলথ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র মাধ্যমে তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেন।

তিনি ‘ভোলা ফোরাম ঢাকা’-এর সেক্রেটারি হিসেবে ভোলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। তাঁর উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ, ভোলায় মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ইপিজেড ও সার কারখানা স্থাপন,ভোলায় বিমান বন্দর স্থাপন, টেকসই নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং ভোলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। এ ছাড়া ‘লালমোহন-তজুমদ্দিন উন্নয়ন পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি এলাকার কিশোর-যুবকদের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও বৃত্তি প্রদানসহ নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

জুলাই বিপ্লবে ভূমিকা

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবে (ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান) মুহা. নিজামুল হক নাঈম ঢাকার রাজনৈতিক সংগঠকদের মধ্যে একজন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরিকল্পনা থেকে শুরু করে এটির বাস্তবায়নে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি আন্দোলনকে সুসংহত রূপ দিতে ১৬ জুলাই থেকে রাজপথে সরাসরি অংশগ্রহন করেন এবং বিডিপির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দলের তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। তাঁকে গ্রেফতারের একাধিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। তিনি এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, সাইনবোর্ড ও শাহবাগ এলাকা থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন যা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে তিনি নিয়মিতভাবে বিডিপি কর্তৃক জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তার সাথে জড়িত যা বিপ্লব এবং নতুন বাংলাদেশের প্রতি তার কমিটমেন্টকে তুলে ধরে।

উপসংহার: একটি উন্নত ও জনবান্ধব ভোলা-৩ এর স্বপ্নদ্রষ্টা

মুহা. নিজামুল হক নাঈম তার দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, জুলাই বিপ্লবে তার সাহসী ভূমিকা এবং ধারাবাহিক জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। এলাকার মানুষ হিসেবে তিনি এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথে মিশে গেছেন। তিনি একটি ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে দুর্নীতি ও বৈষম্য থাকবে না এবং শিক্ষা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মুহা. নিজামুল হক নাঈম উন্নয়নের প্রতীক ফুলকপির পক্ষে আপনাদের দোয়া ও মূল্যবান ভোট নিয়ে ভোলা-৩ আসনাধীন লালমোহন ও তজুমদ্দিন কে একটি উন্নত, কল্যাণময়, সমৃদ্ধ, মানবিক ও নিরাপদ এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সেবক হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।